অধ্যাপক হসপার্স কে অনুসরণ করে দ্রব্য এর সমস্যাটি ব্যাখ্যা করো:

অধ্যাপক হসপার্স কে অনুসরণ করে দ্রব্য এর সমস্যাটি ব্যাখ্যা করো:
দ্রব্যশব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল substance.sub কথার অর্থ নিমো । এবংstance কথার অর্থ হল দন্ডায়মান। সুতরাং এর আক্ষরিক অর্থ হলো  নিমু দণ্ডায়মান, কিন্তু এই আক্ষরিক অর্থ কে প্রচলিত বা দার্শনিক কোন অভিজ্ঞতাতেই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় না। প্রচলিত লৌকিক অভিমত অনুসারে দ্রব্য হল এমন এক অপরিবর্তনশীল সত্তা যা গুনের আঁধার শক্তিও ক্রিয়ার উৎস। যেমন চকহলো একটি দ্রব্য কারণ তাকে অবলম্বন করে সাধারণ গোলাকার আকার লম্বা দৈর্ঘ্য প্রভৃতি গুণগুলি বর্তমান রয়েছে। এমনকি তার লেখা নামক কার্যকে উৎপন্ন করার ক্ষমতা রয়েছে।


                                কিন্তু লৌকিক অভিমতকে গ্রহণ করে নিলে দ্রব্য সম্পর্কে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন দ্রব্যের সহিত গুণের সম্বন্ধ কি?এই সমস্ত প্রশ্ন কে কেন্দ্র করেই দ্রব্য সম্পর্কে দুই ধরনের দার্শনিক মতবাদ গড়ে উঠেছে। যথা-

১: বুদ্ধিবাদ:- যাদের প্রত্যেকেই গুণ অতিরিক্ত দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন তাই তাদের মতবাদ কে দ্রব্য সত্যবাদী মতবাদ বলা হয়।

২:-  অভিজ্ঞতাবাদ:- যাদের লক ছাড়া কোন দার্শনিক অতিরিক্ত দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকারে আগ্রহী নয়, সেই কারণে তাদের মতবাদ কে দ্রব্য সত্তাবিরোধী মতবাদ বলা হয়।

                            এই কারণে হস পার্স বলেন দ্রব্যের প্রকৃত স্বরূপ কে উপলব্ধি করতে হলে বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদী এই দুই মতবাদকে ব্যাখ্যা করে দেখা প্রয়োজন।


1:-বুদ্ধিবাদী ও দ্রব্য সত্যবাদী মতবাদ:

                                                   দেকার্ত স্পিনোজা প্রমূখ  বুদ্ধিবাদীদার্শনিকগণ   দাবি করেনদ্রব্য হল তাই    যা নিজের অস্তিত্বের জন্য অন্য কোন কিছুর ওপর নির্ভর করে না।অর্থাৎ দ্রব্য স্বনির্ভর গুনমাত্রই তাদ্রব্যের উপর নির্ভর করে রয়েছে  । অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক লক বুদ্ধিবাদের এই মতকে সমর্থন করে বললেন দ্রব্য হল গুণ এর অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় আধার। যদিও অভিজ্ঞতায় সাক্ষাৎ ভাবে দ্রব্য বলে কোন কিছুকে পায়না তবুও গুনের অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় আধার হিসেবে দ্রব্যের অস্তিত্বস্বীকার করতে হয়। দ্রব্য না থাকলে গুণগুলি থাকতে পারে না অর্থাৎ দ্রব্য সত্যবাদীরা মনে করেন গুন অতিরিক্ত  দ্রব্যের অস্তিত্ব রয়েছে। এবং অস্তিত্বের ক্রমা  পর্যায়ে  প্রথমে আসে দ্রব্য তারপরওই দ্রব্যের গুন  ।


২:- ‌‌ অভিজ্ঞতাবাদ বা দ্রব্য সত্তা বিরোধী মতবাদ:-

          দ্রব্য সত্তা বিরোধী বিশেষভাবে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউম ও তার অনুগামীরা বলেন বাস্তবে দ্রব্য বলে কিছু নেই। দ্রব্যের ধারণা এক অবাস্তব দুর্বোধ্য কল্পনা মাত্র। গুণের অভিজ্ঞতা হয় বলে গুণের অস্তিত্ব রয়েছে।গুন অতিরিক্ত দ্রব্য বলে কোন কিছু থাকলে গুণের যেমন প্রত্যক্ষ অনুভব হয় তেমনি দ্রব্যের প্রত্যক্ষ অনুভব হত। কিন্তু গুন অতিরিক্ত কোন দ্রব্যের প্রত্যক্ষ অনুভব আমাদের হয়না। হিউমের পথ কে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা দাবি করেন ভাষাগত এক বিভ্রান্তি ও কুসংস্কার এর জন্যই আমাদের মনে গুন অতিরিক্ত দ্রব্যের ধারণার উদ্ভব হয়। বাক্য রীতি অনুসারে বাক্যের উদ্দেশ্য কোন না কোন ব্যক্তি বা বস্তু বাচক শব্দ আর বিধেয় হবে গুনবাচক শব্দ। এই ভাষারীতি জন্যই আমাদের মনে দ্রব্যের ধারণা তৈরি হয়।

                          অধ্যাপক হস পারস বলেন দ্রব্যের সহিত ধারণা পেতে হলে উক্ত দুই অভিমতের সমর্থনে কান্ট দ্রব্য সম্পর্কে যা বলেছেন সে বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।কান্টের দ্রব্য সম্পর্কে মতবাদ বুদ্ধিবাদ অভিজ্ঞতাবাদ এর এক মধ্যবর্তী মতবাদ। তিনি হিউমের সাথে একমত যে প্রত্যক্ষঅনুভবে কোন অপরিবর্তনশীল সত্তার উপলব্ধি আমাদের হয়না। পরিবর্তনশীল গুণগত রই উপলব্ধি হয় কিন্তু দ্রব্যের ধারণা কে অবাস্তব কল্পনা বলা যায়না। জগতের সব কিছুই পরিবর্তিত হলেও সেই পরিবর্তনের মধ্যে এক অপরিবর্তনীয় ধারণা পাওয়া যায় যে অপরিবর্তনশীল সত্যকে স্বীকার না করলে পরিবর্তনশীল সত্তা কেউ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় যেমন জ্ঞানের উপাদান দেয় তেমনি বুদ্ধি জ্ঞান এর আকার প্রদান করে। অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত বিচ্ছিন্ন পরিবর্তনশীল ধারণা গুলিকে বুদ্ধির আকারে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সাজিয়ে নিয়ে অপরিবর্তনশীল সত্তা বা দ্রব্যের ধারণা আমরা গড়ে তুলি।তাই কান্ট এর মতে দ্রব্য আছে যদিও তা বাস্তবে নেই তা আমাদের বোধশক্তির একটি পূর্বতঃসিদ্ধ আকার যা প্রতিটি মানব মনে অবস্থান করে ।


                 _        _        _
                     Kirans Railway (Rrbs) Group Level-1 Posts Practice Work Book & 2018 Solved Paper-Bengali

No comments:

Post a Comment

শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য কি??

শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য কি?? :-    শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য দুটি- ১:  অপরাধী অপরাধ মূলক ক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে তার চরি...