সরল বস্তুবাদ কী?

সরল বস্তুবাদ কী? এই মতবাদের মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা ও বিচার করা:
:-প্রতিটি বুদ্ধিবাদী দার্শনিক মনে করেন জগতে জ্ঞান নিরপেক্ষবস্তুর অস্তিত্ব রয়েছেকিন্তু বস্তুকে আমরা কিভাবে জানি এই প্রশ্নটিই কে কেন্দ্র করে বস্তুবাদ দুই ভাগে বিভক্ত যথা-সরল বস্তুবাদ এবং প্রতিরূপী বস্তুবাদ।
সরল বস্তুবাদ ইরা বলেছেন জগতে অসংখ্য জ্ঞান নিরপেক্ষ বস্তু রয়েছে যাদের আমরা সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষের দাঁড়াও জেনে থাকি।সাধারণ মানুষ যারা প্রত্যক্ষ ক্রিয়া এবং ভৌত জগত সম্পর্কে কোন সমস্যা অনুভব করেননা তারা বিশ্বাস করেন যে আমাদের মন বা চেতনার বাইরে জগত আছে। এবং জগৎ কি আমরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দ্বারা জানতে পারি ।সরল বস্তুবাদ এর সাথে সাধারণ মানুষের প্রচলিত অভিমতের মিল থাকায় এই মতবাদকে লৌকিকবস্তুবাদ বলা হয়।

                      অধ্যাপক  হস পার্স বস্তু সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের প্রচলিত পাঁচটি বিশ্বাসের কথা বলেছেন। যেগুলি কে নিয়ে সরল বস্তুবাদ গড়ে উঠেছে।  যথা-

১.  যে জগতে আমরা বাস করি সেখানে নদী পাহাড় টেবিল-চেয়ার গাছপালা প্রভৃতির মতো অসংখ্য জড়বস্তু রয়েছে যাদের নিয়ে এই বস্তুজগৎ গঠিত। এই জগতে যেমন অসংখ্য মানুষ ও তাদের মন আছে, তেমনি অসংখ্য বাহ্য বস্তুর রয়েছে।

২.  বস্তুকে সাক্ষাৎ ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা জানা যায়। বস্তু জগতে যে রূপে বিরাজ করে তাদের সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষে সেই রূপেই উপলব্ধি করা যায়। অর্থাৎ আমরা বস্তুর প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করি।

৩.  বস্তুর অস্তিত্ব আমাদের জানাবা না জানার ওপর নির্ভর করে না, আমরা জানি বা না জানি বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে। আবার বস্তুর গুণ বা ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে।

৪.  ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় আমরা বস্তুকে সরাসরি জানি কারণ আমাদের মন হল সন্ধানে আলোর মত যখন যে বস্তুর সহিত মনের সংযোগ ঘটে তখন সেই বস্তুর জ্ঞান বা চেতনা গড়ে ওঠে।

৫.  জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বস্তুর সহিত মনের সংযোগ ঘটায় আবশ্যক  হলেও অস্তিত্বের জন্য তারা একে অপরের ওপর নির্ভর করে না অর্থাৎ বস্তু ওমন বাহ্যিক সম্বন্ধে যুক্ত।


সমালোচনা:-   সরল বস্তুবাদ এর বিরুদ্ধে আপত্তি গুলি হল-

১.  বস্তু যেরূপ তাকে যদি সাক্ষাৎ সেরূপে জানা যায় তাহলে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন-
যখন আমরা দড়িকে সাপ রূপেপ্রত্যক্ষ করি। বস্তু যে রূপ তাকে সেই রূপে জানলে সাপের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়।

২.  সরল বস্তুবাদ স্বীকার করে নিলে অধ্যাস বা অমূল প্রত্যক্ষ এর ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।যেখানে কোন বিষয় উপস্থিত থাকে না কিন্তু বিষয়ের প্রত্যক্ষ জ্ঞান উৎপন্ন হয় তাকে অধ্যাস অমূলপ্রত্যক্ষ বলে। যেমন-
দূর থেকে পাহাড় দেখলে তা মন সবুজে ঢাকা দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে পুরো পাহাড় সবুজে ঢাকা থাকে না মাঝে মাঝে কিছু অংশ ফাঁকা থাকে।

৩.   সরল বস্তুবাদ স্বীকার করে নিলে একই বস্তুর মধ্যে উপস্থিত দুটি পরস্পর বিরোধী দলের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন-
একটি সোজা কাঠির কিছুটা অংশ জলে ডুবিয়ে রাখলে সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষে জলের নিচে অংশ বেঁকে যেতে দেখা যায় যা বাস্তবে ঘটে না।

৪.   সরল বস্তুবাদ স্বীকার করে নিলে আমাদের জ্ঞানের সত্যতা বিচার করে দেখা সম্ভব হয় না কারণ বস্তু যেরূপ তাকে সাক্ষাৎ সেই রূপে জানলে সব ধরনের জ্ঞান ই যথার্থ হবে।

  এই কারণে হস পার্স বলেন ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাজোড়া বস্তুর অস্তিত্ব ও স্বরূপ সাক্ষাৎ ভাবে ধরা দেয় এমন বলা পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত নয় এর বিপরীত মত এর মধ্যেও কিছুটা সত্যতা রয়েছে।



WBPRB




1 comment:

শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য কি??

শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য কি?? :-    শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য দুটি- ১:  অপরাধী অপরাধ মূলক ক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে তার চরি...